জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

লক্ষ্য এবার নেদারল্যান্ডস

অন্য অলিম্পিয়াডগুলোর সঙ্গে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের একটু পার্থক্য আছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড সাধারণত হয় প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, অংশ নিয়ে পারে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আইজেএসও অনুষ্ঠিত হয় অনুর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এবারে তাই অংশ নিতে পারবে ১ জানুয়ারি ২০০২ এর পর জন্ম নেওয়া যে কোন শিক্ষার্থী। এবার আইজেএসও হবে নেদারল্যাণ্ডে। অর্থাৎ, লক্ষ্য এবার নেদারল্যান্ড বিজয়ের।

বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে চাইলে তুমিও পারো আইজেএসও দলের সঙ্গী হতে। এজন্য তোমাকে অংশ নিতে হবে ৩য় বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড বা বিডিজেএসওতে। বিডিজেএসও অনুষ্ঠিত হবে দুইধাপে। প্রথমে হবে বাছাই অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডে ক্যাটাগরি তিনটি- জুনিয়র (৬ষ্ঠ-৮ম), সেকেন্ডারি (৯ম-১০ম) ও বিশেষ (১ জানুয়ারি ২০০২ এর পরে জন্ম এমন ১১শ-১২শ শিক্ষার্থী)।

বিডিজেএসও-এর প্রথম ধাপ আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও কুমিল্লার নির্ধারিত ভেন্যুতে। এর বাইরে একটি অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে অনলাইনেও। যে কোন ভেন্যুতে বা অনলাইনে অংশ নিতে পারবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। আঞ্চলিকের বাছাইকৃত ও অনলাইনের সেরাদের নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ৩য় জাতীয় বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড। সেখান থেকে বাছাকৃতদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করে সেখান থেকে সেরাদের নিয়ে গঠন করা হবে নেদারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ১৪তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের বাংলাদেশ দল।

আঞ্চলিক অলিম্পিয়াডে প্রশ্ন হবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থেকে। ১৫ টি সমস্যার সমাধান করার জন্য সময় পাওয়া যাবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। সমস্যাগুলো এমন হবে যে উত্তর দেওয়া যাবে এক শব্দে।

প্রস্তুতি হিসেবে পড়তে হবে ক্লাসের বিজ্ঞান ও গণিত সংশ্লিষ্ট বইগুলো। তবে শর্ত হল পড়তে হবে বুঝে বুঝে। যেমন শুধু সূত্রের প্রমাণ আর সংজ্ঞা পড়ে বিডিজেএসওর সমস্যা সমাধান করা কঠিন হবে। এজন্য মূল ব্যাপারগুলো পড়ে বুঝতে হবে। কোন একটা তত্ত্ব কেন ও কীভাবে কাজ করে সেজন্য ভাবতে হবে, তবেই হবে বিডিজেএসওর প্রস্তুতি।

বিডিজেএসও-তে কিন্তু সমস্যাগুলো তোমাদের বইয়ের অনুশীলনীর মত করে আসবে না। আসলে অনুশীলনী আর সমস্যার মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। অনুশীলনীতে থাকে এমন প্রশ্ন যার উত্তর বের করার জন্য নির্ধারিত একটি পদ্ধতি আছে। যা অনুসরণ করলে খুব সহজেই সমাধানে পৌছা সম্ভব। কিন্তু ‘সমস্যা’ সমাধানের কোন নির্ধারিত পদ্ধতি নাই। সমাধানের জন্য যে সূত্র তত্ত্ব দরকার তা হয়ত জানা আছে, কিন্তু সমাধান পদ্ধতি নিওর্ধারিত নাই। বুদ্ধি দিয়ে তোমাকে বুঝতে হবে কীভাবে তা সমাধান করা যায়। বিডিজেএসওতে কেমন সমস্যা আসতে পারে একটা উদহারণ দেওয়া যাক। সমস্যাটা রসায়নের,

একটা যৌগের এম্পিরিকাল ফরমুলা CH2O, CH অথবা N2O। যৌগটির একটা অণুতে মোট ইলেক্ট্রন ৯৬টি। যৌগটির আণবিক সংকেত কী?

তমি নিশ্চ্য এম্পিরিকাল ফরমুলা কী জান, এ সংক্রান্ত কিছু অনুশীলনীও নিশ্চয় তুমি করেছ। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে কিন্তু শুধু তা জানলেই চলছে না, সঙ্গে জানতে হবে ইলেক্ট্রন প্রোটনের হিসাব। এমনকি কোন একটি সংখ্যার উতপাদক-গুণণীয়কের ধারনাও বুদ্ধিও ব্যবহার করতে হবে।

বিডিজেএসওতে সরাসরি কোন গণিতের সমস্যা সমাধান করতে হয় না। তবে গণিতের ধারণাগুলো প্রয়োজন পড়বে সমস্যা সমাধানের জন্য। বিশেষভাবে দরকার সমীকরণ ও লেখচিত্র সংক্রান্ত গণিতের ধারণা। গণিত বইয়ের এই অংশটা পড়ে গেলা যেতে পারে। জ্যামিতির ক্ষেত্রে কোণ-ক্ষেত্রফল-আয়তন এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে ভালো করে। সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির জন্য পড়তে হবে কিছুটা ত্রিকোণমিতিও।

পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বইয়ে থাকা অনুশীলনীর সমস্যাগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করলে কাজে লাগবে। বিডিজেএসও-তে মূলত গাণিতিক সময়সাই থাকবে বেশি। যেহেতু সরাসরি বইয়ের মতো সমস্যা থাকবে না তাই সূত্রগুলোর অনুধাবন করে পড়লেই কাজে দিবে বেশি। সম্ভব হলে বইয়ের সব গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে ফেলা উচিত।

রসায়নের ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ সমস্যা হবে গাণিতিক। তাই তত্ত্ব বোঝার পাশাপাশি গাণিতিক সব সমস্যার সমাধান করে ফেলা উচিত। জৈব যৌগ অংশ থেকে তেমন কোন সমস্যা থাকবে না। তবে পরমাণু-অণুর গঠন, বন্ধন সাম্যাবস্থার মত ধারণাগুলো খুব স্পষ্ট থাকা চাই।

জীববিজ্ঞানে একেবারে তথ্যমূলক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম। অনেকের ধারণা জীববিজ্ঞান মুখস্থ করার বিষয়, কিন্তু তথ্য মুখস্থ করে জীববিজ্ঞান অংশে ভালো করা কঠিন হবে। বরং পুরো বই বুঝে পড়ে ফেললে বেশি কাজে দিবে।

জুনিয়র ক্যাটাগরির জন্য ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান গুলোই সিলেবাস। এ বইগুলোতে গাণিতিক সমস্যা খুব বেশি নাই। তবে গাণিতিক সমস্যা নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তোমার ক্লাসের গণিত বইয়ের ধারণা স্পষ্ট থাকলেই সহজেই পারবে সমাধান করতে।

নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আইজেএসওর মঞ্চে দাঁড়াতে চাও? এখনই শুরু কর প্রস্তুতি।

জাতীয় উৎসবের প্রস্তুতি

৩য় বিডিজেএসও জাতীয় পর্বের প্রস্তুতির জন্য পড়তে পারো আরও।