কী পড়বে, কীভাবে পড়বে
তোমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে—বিডিজেএসও-র জন্য কী কী পড়বে, কীভাবে প্রস্তুতি নিবো। এই লেখাটি থেকে তুমি এই সম্পর্কিত একটি ধারণা পেতে পারো । প্রথম ধাপের প্রস্তুতির জন্য পড়তে হবে ক্লাসের বই। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে পারো—ক্লাসের বইতে অনেক কিছুই আছে যেগুলো পরীক্ষার জন্য তোমাদের মুখস্থ করতে বলা হয়। মজার ব্যাপার হল, ঐ জিনিসগুলোর বেশিরভাগের পেছনেই অনেক চমৎকার কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে, যেগুলো বুঝতে পারলে আর মুখস্থ করতে হয় না। বিডিজেএসও-তে যেহেতু মুখস্থ করে কোনো লাভ হবে না, কাজেই যখন পড়বে তখন সেগুলো বুঝে পড়ার চেষ্টা করবে।
বিডিজেএসও-র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইলে তুমি তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে পারো—
প্রথম ধাপ (ছোটদের জন্য)
যারা একটু ছোট, প্রথমে তোমাদের নিজেদের ক্লাসের বিজ্ঞান বই শেষ করতে হবে। বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হলে আশেপাশের বড়দের কাছে কিংবা তোমার শিক্ষকদের থেকে সাহায্য নিতে পারো। ইন্টারনেট ঘেঁটেও বোঝার চেষ্টা করতে পারো। এমনকি বন্ধুরা বন্ধুরাও আলোচনা করে সমাধান করে ফেলতে পার। এবং সেটাই মনে হয় সহজ উপায়, কার্যকরীও!
ক্লাসের বইয়ের অনেক কিছুই অস্পষ্ট লাগতে পারে। এই লেখার শেষ অংশে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর জীববিজ্ঞানের জন্য আলাদাভাবে কিছু বই নাম দেওয়া হয়েছে। ক্লাসের বই পড়ে কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে ওই বইগুলো থেকে দেখতে পারো। বইগুলো ইংরেজিতে লেখা, কিন্তু খুব চমৎকার করে সহজ ভাষায় লেখা, কাজেই পড়তে সমস্যা হওয়ার কথা না।
সেই সাথে মুহম্মদ জাফর ইকবালের “দেখা আলো না দেখা রূপ” বইটিও পড়তে পারো। যদিও এই বই প্রবলেম সলভিং-এর জন্য নয়, কিন্তু আলো সম্পর্কিত পরিষ্কার ধারণার জন্য বইটি অসাধারণ!
দ্বিতীয় ধাপ (আরেকটু বড়দের জন্য)
ক্লাসের বিজ্ঞান বইটুকু শেষ করে ফেললে তুমি পরের ক্লাসের বই ঘেঁটে দেখতে পারো। সেই সাথে বইয়ের গাণিতিক সমস্যাগুলোও সমাধান করতে হবে। খুব ভালো হয়, যদি নিজে নিজে এগুলো সমাধান করার চেষ্টা কর। দিনের পর দিন চেষ্টা করেও যদি কোনো সমস্যা সমাধান করতে না পারো— তখন অন্য কারও সাহায্য নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে পারো। (মনে রাখবে, দ্রুত সমাধান করে ফেললেই সবকিছু হয়ে যায় না। সমাধান বের করে ফেলার চেয়ে বের করার চেষ্টাটা ইম্পর্টেন্ট। কেউ যদি একটা সমস্যা দিনের পর দিন ধরে সমাধান করার চেষ্টা করে, তাহলে তার মস্তিষ্ক আরও চমৎকার কাজ করা শুরু করে!)
বিজ্ঞানের বেশকিছু গাণিতিক সমস্যা আছে, যেগুলো সমাধান করার জন্য ত্রিকোণমিতি, ফাংশন, ফাংশনের গ্রাফ, ভেক্টর—এই জিনিসগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হয়। কাজেই এগুলো পড়তে পারো।
একটা জিনিস মনে রেখ, পাটিগণিতে ঐকিক নিয়ম নামে একটা জিনিস তোমরা শিখেছ নিশ্চয়। ঐকিক নিয়ম কিন্তু খুবই দরকারি একটা জিনিস। পদার্থবিজ্ঞান আর রসায়নের অনেক কিছু বুঝতে, সমস্যা সমাধান করতে এর ধারণা খুব কাজে দেয়। তাই ঐকিক নিয়মের খুঁটিনাটি ব্যবহার শিখে নিতে হবে খুব ভালো করে।
তৃতীয় ধাপ (আরও বড়দের জন্য!)
- যারা একটু বড়, মোটামুটি অষ্টম শ্রেণি বা তার উপরে, তাদের জন্য ক্লাসের বইয়ের বাইরে কয়েকটা বইয়ের নাম বলছি। এসব পড়ে দেখতে পারো—
পদার্থবিজ্ঞান
১. পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ
লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল,
প্রকাশনী: তাম্রলিপি
এই বইটি মূলত নবম-দশম শ্রেণির জন্য লেখা, কাজেই তোমরা চাইলে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ডের বই পড়ার আগে এই বইটি পড়তে পারো। (সত্যি বলতে কী, আমরা এই বইটি পড়তে বলব খুব গুরুত্ব দিয়ে।) পুরো বইটিই পড়তে হবে এবং সেই সাথে অধ্যায়ের শেষে যেসব সমস্যা দেয়া আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
২. University Physics With Modern Physics (14th Edition)
লেখক: Young and Freedman
প্রথম দেখায় তোমরা ঘাবড়ে যেতেই পারো, কারণ এই বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লেখা। তবে সত্যি বলতে কী, খুবই সহজ ভাষায় লেখা, যদি নবম-দশম শ্রেণির বই ভালোমত শেষ করে থাকো তাহলে এই বইটা পড়া খুব একটা কঠিন হবে না তোমাদের জন্য। প্রথম-প্রথম ইংরেজি বুঝতে সামান্য একটু সমস্যা হতে পারে, তবে বইটা তো আর ইংরেজির না, ফিজিক্সের। কাজেই ভাষার সমস্যার জন্য তুমি আটকে থাকবে না, চিন্তা নেই!
এই বইয়ের সব চ্যাপ্টার আসলে তোমার পড়া জরুরি না। যেসব চ্যাপ্টার পড়বে তা হল–
1-8, 11(torque excluded), 12(Bernoulli excluded), 13, 14 (physical pendulum excluded), 17-19, 21, 23, 25, 26, 27 (only right hand rule), 34.
রসায়ন
১. General Chemistry
লেখক: Ebbing—Gammon,
প্রকাশনী: Cengage Learning
এই বইটা বেশ সহজ করে লেখা। বইটায় ঠিক পাঁচটা পার্টে অনেকগুলো চ্যাপ্টার। সেক্ষেত্রে তোমার প্রথম চারটা পার্ট মানে part 1 থেকে part 4 পড়লেই হবে। যারা নিজের পাঠ্যবই আর একটু উপরের ক্লাসের বই পড়ে আত্মবিশ্বাস পেতে শুরু করেছ তারা এই বইটা পড়ে কনসেপ্ট আর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিতে পারো।
২. Chemistry
লেখক: Raymond Chang,
প্রকাশনী: McGraw-Hill Education
রসায়নের গভীরে ডুব দিতে গেলে এই বইটা দিয়ে শুরু করার চাইতে জোস আর কিছু নাই। চ্যাং সাহেবের লেখা এই বইটার সব থেকে অসাধারণ দিক হল চ্যাপ্টার শেষের প্রবলেমগুলো। মোটামুটি বেশ সহজ ইংরেজিতে লেখা বইটা পড়লে আনন্দ তো পাবেই তার সাথে রসায়নের কনসেপ্টগুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে। আর প্রবলেম সলভ করতে করতে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পার কয়েকগুণ! এই বইয়ের একেকটা প্রবলেমের পেছনে লেগে থাকাও বেশ আনন্দের। বইয়ের যে চ্যাপ্টারগুলোয় জোর দিতে পার- 1-6, 8, 9, 11-16, 19, 23.
উপরের বই দুটো মূলত ভার্সিটিতে পড়ানো হয়। কিন্তু বিশ্বাস করো আর নাই করো, বই দুটোতে রসায়নের বেসিক ব্যাপার-স্যাপারগুলো একেবারে জলবৎ তরলং করে বোঝানো হয়েছে, ইলাস্ট্রেশানও বেশ চমৎকার, পড়ে মজা পাওয়ার কথা। শুধু বেসিক বললে ভুল হবে, বইগুলো থেকে তুমি রসায়নের গভীরেও ডুব দিতে পারবে, সেক্ষেত্রে গভীরতা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তোমার, তুমি কতটা সময় দিতে পারবে তার ওপর। সেক্ষেত্রে আইজেএসও-র মূল সিলেবাসের সাথে মিল রেখে পড়াই বেশি কাজে দেবে।
জীববিজ্ঞান
১. উচ্চ মাধ্যমিক প্রাণিবিজ্ঞান
লেখক: গাজী আজমল,
প্রকাশনী: গাজী পাবলিশার্স
২. উচ্চ মাধ্যমিক উদ্ভিদবিজ্ঞান
লেখক: আবুল হাসান,
প্রকাশনী: হাসান বুক হাউজ
৩. Campbell Biology
লেখক: Reece, Urry, Cain,
প্রকাশনী: Pearson
এই বইটা জীববিজ্ঞান অংশের পরিপূর্ণ প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বইগুলি পড়ে শেষ করে তুমি এই বইটা শুরু করতে পারো, কিংবা চাইলে এমনিতেই শুরু করতে পারো। বইটায় কোন একটা টপিকের একদম বেসিক কনসেপ্ট থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। খুব সহজ করে লেখা হয়েছে, ছবি এবং ইলাস্ট্রেশনগুলিও চমৎকার, কাজেই আমাদের ধারণা তুমি বইটা পড়ে মজা পাবে।
৪. Biology
লেখক: Raven,Johnson,Mason,Losos,Singer
প্রকাশনী: McGraw-Hill Higher Education
মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক জীববিজ্ঞান বই এবং Campbell Biology—এই বই কয়টা ভালোভাবে পড়লে জীববিজ্ঞান অংশের প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
চতুর্থ ধাপ
-
প্রস্তুতির মাঝপথে, বইগুলি থেকে কোন একটা টপিক পড়ে শেষ করার পর কিংবা অন্য যেকোনো সময়ে তোমার যদি যাচাই করে দেখতে ইচ্ছে হয় যে, তুমি BdJSO কিংবা IJSO এর প্রশ্নগুলি সমাধান করতে পারবে কিনা, তাহলে তুমি নিচের লিংকগুলো থেকে প্রশ্ন ডাউনলোড করে নিতে পারো। IJSO -র ওয়েবসাইটে কিন্তু প্রশ্নের পাশাপাশি সমাধানও দেয়া আছে। জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড : সমস্যা ও সমাধান সংকেত বইটিতে বিডিজেএসও-র প্রশ্নের পাশাপাশি সমাদধান সংকেত পেয়ে যাবে। আমরা আশা করবো যে, তুমি কোন একটা প্রশ্ন প্রথমবার চেষ্টা করে সমাধান করতে না পারলেই সমাধান দেখতে যেও না।
একটা সমস্যা একবারে সমাধান করা না-ই যেতে পারে, কিন্তু সেজন্য হাল ছেড়ে দিলে হবে না। সমাধান দেখে নিলে কিন্তু তোমার মস্তিষ্ক আসলে শেষ পর্যন্ত কোন কিছু চিন্তা করে বের করতে শিখছে না। একটা সমস্যা সমাধান করতে হয়তো তোমাকে একবারের জায়গায় পাঁচবার, দশবার, এমনকি পঞ্চাশবার চেষ্টা করতে হতে পারে। যতবার তুমি চেষ্টা করবে, প্রতিবারই কিন্তু একটু একটু করে তোমার চিন্তা করার দক্ষতা বাড়বে। তুমি একটা সমস্যাকে বিভিন্নভাবে আক্রমণ করতে শিখবে। প্রথম প্রথম হয়তো একদিনে কিংবা এক সপ্তাহেও একটা সমস্যা সমাধান করতে পারবে না, হয়তো পনেরো-বিশ দিন কিংবা এক মাস লেগে যাবে। কিন্তু তুমি যখন নিজের চেষ্টায় প্রথমবারের মতো একটা সমস্যা সমাধান করতে পারবে, তখন তোমার যে আনন্দ হবে, সেটা যে কী অবিশ্বাস্যরকম তীব্র, সেটা তোমার নিজেরই বিশ্বাস হবে না! এভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে, তুমি আস্তে আস্তে আরো দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারবে।